ঈশ্বরদী প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীতে সরকারি বরাদ্দের বিনা মূল্যের সার ও বীজ প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কৃষি প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলে সুবিধাভোগী কৃষকরা এ অভিযোগ করেন। তাদের দাবি উপজেলার প্রায় ইউনিয়নেই বেশির ভাগ প্রকৃত কৃষকই প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
উপজেলার প্রণোদনা বঞ্চিত কৃষকরা জানান, জমি নেই, হালচাষ নেই এমন কিছু সুবিধাবাদী মানুষ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আতাত করে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন ফলস্রুতিতে বিনা মূল্যে সার-বীজের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত কৃষক। অপরদিকে জমি না থাকাতেও অসাদুপায় অবলম্বন কওে ভুয়া কৃষকরা তাদের প্রণোদনার সার ও বীজ কম মূল্যে বিক্রি করছেন সরকার নিবন্ধিত ডিলারসহ বিভিন্ন সারের দোকানে যেগুলো চড়া মূল্যে ডিলারদেও থেকে কিনতে হচ্ছে কৃষকদের।
কিছুদিন আগে আনুষ্ঠানিক কৃষি প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। সেখানে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা এখন পর্যন্ত সরিষা মসুর, ভুট্টা, গম, ধান, খেসারী, সূর্যমুখী বীজ ও সার পেয়েছে বলে জানানো হয়। তালিকাভুক্ত বাকি কৃষকদের মধ্যে ধাপে ধাপে অন্যান্য বীজগুলো বিতরণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রণোদনা দিতে প্রায় ১০ হাজার জন সুবিধাভোগী কৃষকের তালিকা তৈরি করেছেন কৃষি ইউনিয়ন কমিটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণে কৃষি কর্মকর্তাদের প্রকৃত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করার কথা থাকলেও সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা না বলে কিংবা মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে জনপ্রতিনিধি বা অন্যদের ওপর নির্ভর করছেন। এতে যাচাই-বাছাই ছাড়াই জমিহীন এমনকি কোনো দিন কৃষিকাজ করেননি এমন ব্যাক্তিদের নামও কৃষকদেও নামের তালিকায় স্থান পেয়েছে। ফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।
দাশুড়িয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক আলী বলেন, আমি প্রতি বছরই প্রায় ১০ বিঘা সবজি চাষ কওে থাকি । এবার ও ওল কপি ৪বিঘা, গাজর ০৪ বিঘা ও পেঁয়াজ প্রায় বিঘা চাষ করেছি। আমি কৃষি আবাদের উপরই নির্ভরশীল, আমিতো স্লীপের সার-বীজ কোন দিনও পাইনি। তাছাড়া যারা কৃষকদের তালিকা বানায় তারা কৃষকনয় আত্মীয়দের নাম দেয় সেই তালিকায় এ জন্যই আমরা প্রকৃত কৃষকরা সেই সুবিধা হতে বঞ্চিত হই।
একই এলাকার কৃষক মাসুদ বলেন, আমি সারা বছর কৃষি কাজ ও কৃষি ফসলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাকে কোন প্রকার কৃষি ভিত্তিক সহায়তার কথাও কেউ কোনদিন বলেনি। ভালো ফলনের জন্য পরিমিত কীটনাশকের প্রয়োজন কিন্তু বাজাওে সেটার স্বল্পতা দেখা দিলে ১ বস্তা সারের জন্য ডিলারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে আমার পায়ের পাতা ক্ষয়ে গেছে সেখানে সরকারি প্রনোদনার সার -বীজ তো স্বপ্নের ব্যাপার।
সলিমপুর ইউনিয়নের কৃষক দুলাল প্রামানিক বলেন, আমিতো গ্রীষ্মকালীন ফল থেকে শুরু করে শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করি। এবারও তিন বিঘা গাজর ও ৫বিঘা ভূট্রা আবাদ করেছি, ফুলকপি আর ওল কপি সেতো আছেই। কোনদিন তো কোন কৃষি আফিসারকে দেখলাম না যে তারা মাঠে এসে কৃষকদের কোন পরামর্শ দেন বা তাদেও ভালো মন্দের খোঁজ খবর রাখেন। প্রতিবছরই শনি সরকার কৃষকদেও সার-বীজ প্রণোদনা দেয় তবে আমি কোনদিন পাইনি।আবার প্রকৃত কৃষকদের মধ্যেও কেউ পেয়েছে সেটাও কোনদিন শুনিনি। তবে এসব প্রণোদনা যারা পেয়েছে তারা বেশির ভাগই কৃষক না।
লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক আখতার বলেন, কৃষিকাজ করেই জীবনটা শেষ করলাম কিন্তু আজ পর্যন্ত কৃষি প্রণোদনার কোন খেঁাজ খবরই জানলামনা, এগুলা কখন এবং কারা কীভাবে দেয় প্রশ্ন কওে তিনি বলেন, আমি এবারো ৭ বিঘা পেঁয়াজ আবাদ করেছি সাথে অন্যান্য ফসলতো আছেই। আমি সরকার বা কৃষি অফিসারদের থেকে কোন কিছুই পায়নি, আমার সাথে কোন কৃষি অফিসারের যোগাযোগও হয়নি।
কৃষক বকুল ইসলাম বলেন, প্রণোদনার তালিকা তৈরী করে এলাকার মেম্বার বা সরকারী দলের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। উনারা যাদের নাম তালিকায় দেন তারাই প্রণোদনা পায়। তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলেই মেলে প্রণোদনার কার্ড সেখানে কৃষক হওয়াটা মূখ্য নয়।
পাকশী ইউনিয়নের কৃষক জুনাব আলী বলেন, আমি আমাদের এলাকার সবচেয়ে বড় কৃষক। কেননা আমার চেয়ে বড় চাষী অত্র এলাকাতে একটিও নেই অথচ আমি কোন দিনও এদের তালিকা ভুক্ত হতে পারলাম না। আর যারা তালিকা ভুক্ত হয়ে প্রণোদনা তোলেন তারা আবার সেগুলো ডিলারদের কাছে বেঁচে দিয়ে আসেন। যারা প্রকৃত কৃষকই না তারাই প্রণোদনার সুবিধা পাচ্ছে, আর বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত কৃষকরা। আর কৃষি অফিসাররা তো দেখা করেনা আমরাই কষ্ট করে যোগাযোগ করি ।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষকরা জানান, আমরাতো বিঘা বিঘা জমি চাষাবাদ করি কিন্তু কৃষিকার্ড পায়নি। কখন দেয়া হয়েছে তাও জানিনা বা কেউ জানায়নি। তাদের অভিযোগ, ইউনিয়নের বেশির ভাগ প্রকৃত কৃষকদের এ সরকারি সুবিধার আওতায় আনা হয়নি। খোঁজখবর না নিয়েই যাদের জমি খুব কম, কিংবা নেই, জমি থাকলেও চাষ করেন না এমন ব্যক্তির নামের তালিকা করার মধ্য দিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করছেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী’র থেকে প্রণোদনার তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা তৈরীর নিয়ম উপজেলায় যেইটা আসে তা ভাংতি করে ইউনিয়ন পর্যায়ে দেয়া হয় । আর কৃষকদের তালিকা ইউনিয়ন কৃষি কমিটি নামের কমিটি আছে তারাই করে থাকেন এবং আমাদের কাছে পাঠান। আমরা সেই তালিকা অনুযায়ী তাদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ করি।