চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে যৌতুক বাবদ একটি আর ওয়ান ফাইভ মোটরসাইকেল না পেয়ে এক গৃহবধূকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মোটরসাইকেল দিতে অস্বীকৃতি জানালে গৃহবধূকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও জমি কেনা বাবদ শশুড় বাড়ি থেকে নেয়া ৪ লাখ টাকা ফেরত চাওয়ায় এই মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ গৃহবধূর পরিবারের।
স্থানীয় বাসিন্দা, নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবার এবং বিভিন্ন নথি সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় ৪ মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর কামারপাড়া গ্রামের নুরুল হোদার ছেলে মো. আব্দুল কাদের ও লক্ষীপুর স্কুলপাড়া গ্রামের তামান্না খাতুনের। বিয়ের সময় তামান্নাকে তার পরিবার ৫ ভরি সোনা ও আব্দুল কাদেরকে ৫ আনা ওজনের একটি সোনার আংটি প্রদান করে তামান্নার পরিবার।
মারধরের শিকার গৃহবধূ তামান্না খাতুন বলেন, বিয়ের দুই মাস পরে স্বামীর পরিবার জমি কেনা বাবদ আমার বাবার পরিবারের কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা নগদ গ্রহণ করে। এই টাকা ধার হিসেবে নিয়ে শোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। কিছুদিন পর একটি আর ওয়ান ফাইভ (R15) মোটরসাইকেল যৌতুক হিসেবে চায় আব্দুল কাদের। কিন্তু তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বেধড়ক মারধর করে আমাকে। মারধর করেই ক্ষান্ত হননি, পরে নানা রকম হুমকি ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে এখনো।
তামান্না খাতুনের বোনের স্বামী মো. কিবরিয়া জানান, বিয়ের পর থেকেই তাকে আব্দুল কাদেরের পরিবারের লোকজন নানারকম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে শালিস করতে চাইলেও তাতে সমাধান হয়নি। বিভিন্ন সময়ে অনেক মারধর করতো। এমনকি মারধরের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ছাড়পত্র নিতে দেয়নি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর মারধর করলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
তামান্নার ভাই পারভেজ আলী বলেন, মাটি কেনার কথা বলে টাকা নিয়েছে ৪ লাখ। কিন্তু টাকা চাইতে গেলে আরও নির্যাতন করতে থাকে। দুই মাসের কথা বলে টাকা ধার নিয়েছিল আমার শালির জামাই। মারধরের পরে মেডিকেলে ভর্তি করা হলে সেখান থেকে আসার দুইদিন পর তালাকনামা পাঠায়। আমরা তালাক গ্রহণ করিনি। ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
তামান্না খাতুনের মা পারভিন বেগম বলেন, বিয়ে করার পর থেকেই আমার মেয়েকে নির্যাতন করত। আর ওয়ান ফাইভ গাড়ি চায় জামাই। এসব দিতে পারব না বলে জানালে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিম আলী জানান, মারধরের বিষয়টি শুনেছি। ইউনিয়ন পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ হলেও এর কোন সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এখন যেহেতু বিষয়টি আদালতে গেছে, সেহেতু আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাছির উদ্দীনকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমি একটি প্রশিক্ষণে অফিসের বাইরে রয়েছি। আদালতের দেয়া তদন্তভার প্রদানের বিষয়টি জানতে পেরেছি। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।