আগারগাঁও প্রতিনিধিঃ রাজধানীর শেরেবাংলা থানাধীন আগারগাঁও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের গাড়ির তেল চোর চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার পরেও সক্রিয় তেল চোর চক্রের সদস্যরা।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল আগারগাঁও। এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন যাবত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি গাড়ি থেকে নিয়মিত তেল চুরি করে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র। দেশের জনপ্রিয় দৈনিক আমার বার্তা পত্রিকায় ১০শে আগস্ট “সরকারি দপ্তরের ৬ কোটি টাকার তেল আত্মসাৎ করছে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র”
শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসন তৎপরতা দেখায়। সেদিনই চার দোকানে অভিযান করে গ্রেফতার করা হয় ৪ জনকে। সেই সাথে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল।
তবে অভিযানে গ্রেফতার হয়নি চোর চক্রের মূল হোতা রাকিব, বিল্লাল, রাজিব ও কুদ্দুস। আটক হয়েছে তাদের দোকানের কর্মচারী বেতনভুক্ত তেল চোরের ৪ সদস্য।
১০ শে আগস্ট বিকেলের অভিযানের পর এস আই আনোয়ারের নেতৃত্বে ১১ আগস্ট রাতেই আবারও অভিযান করে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরের সামনে থেকে ৬০০ লিটারের বেশি তেল উদ্ধার করে। পরে ১২ আগস্ট ভোরে আইসিটি টাওয়ারের সামনে থাকা রাজস্ব ভবন ২ এর নির্ধারিত জমিতে থাকা দোকানে ঔষধ প্রস্তুতকারী ইনসেপ্টা কোম্পানির তেল বিক্রি অবস্থায় গাড়ি ও চালককে আটক করা হয়। যদিও এবিষয়ে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা সাব-ইন্সপেক্টর আনোয়ার জানায় আটককৃত গাড়ির চালক কান্নাকাটি ও অনুনয় বিনয় করে ক্ষমা চাইলে তাকে তাৎক্ষণিক ছেড়ে দেন তিনি। এই অভিযানে কারও নামে মামলা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, এর আগের অভিযানে মামলার সাথে জব্দকৃত জ্বালানি তেল তালিকাভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে নতুন কোন মামলা রুজু করা হয়নি।
গতকাল সোমবার ২৯/০৪/২২ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এখনো চোরচক্র সক্রিয়। রাকিব, বিল্লাল, রাজিব ও কুদ্দুসের নেতৃত্বে সকল অবৈধ তেল চুরির কার্যক্রম চলছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সামনে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে প্রকাশ্যেই চলছে এই চুরি ব্যবসা। অন্যদিকে আইসিটি ভবনের অপরপার্শ্বে রাজস্ব ভবন ২ এর জমি দখল করে চোরচক্রের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এখানে প্রতিনিয়ত একটার পর একটা গাড়ি থেকে তেল নামিয়েই যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারি গাড়ি থেকে। গত ২৩ তারিখ বিকেলে বিজ্ঞান জাদুঘরের সামনে অবস্থিত চোরাই তেল দোকানে শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া একটি এম্বুলেন্স থেকে তেল চুরি করে নিচ্ছিলেন অনেকটা প্রকাশ্যেই। যার গাড়ি নাম্বার ঢাকা মেট্রো ছ (৭১–৩৩৯৭) এম্বুলেন্স চালকের যোগসাজশে জ্বালানি তেল চুরি করে নিয়েছে চোর চক্রটি। তেলের কেমন দাম পাচ্ছেন এখানে এবং কেন তেল চোরদের সরকারি গাড়ি থেকে তেল নামাতে দিয়েছেন চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘প্রতি লিটার অকটেন ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এছাড়া তিনি জানান সব ড্রাইভাররাই এটা করে। এটা ছাড়া পকেট খরচ চলে কিভাবে। যাইহোক ভাই আমার নতুন চাকরি আমাকে এবারের জন্যে ক্ষমা করে দিন।
খবর নিয়ে জানা যায় চক্রটির প্রধান রাকিব বর্তমানে জাতীয় সংসদ সচিবালয় আবাসিক কোয়াটারের ভিতরে বি-টাইপ/২ নং বিল্ডিং এর তৃতীয় তলায় হান্নান নামক এক কর্মকর্তার নামে বরাদ্দকৃত ফ্লাটে মাসিক চুক্তিতে ভাড়ায় থাকেন।
তেল চুরির ব্যবসা করে অল্প কিছু দিনেই কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন রাকিবসহ চক্রটি।
এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান রাকিব, বিল্লাল,রাজিব ও কুদ্দুস এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মামলা হয় তবে গ্রেফতার হতে দেখা যায়নি তেমন। স্থানীয় প্রশাসন মাসিক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করে থাকে। বলা যায় অনেকটা প্রশাসনের পাহারাতেই চলছে চোরাই তেলের এই ব্যবসা। চোরাই তেলের ব্যবসা করার জন্য প্রতি মাসে দোকান প্রতি ওসির নামে ১০ হাজার, র্যাবের নামে সাপ্তাহিক ৩ থেকে ৫ হাজার, দৈনিক টহল পুলিশকে ৩শ টাকাসহ অনেক খরচ। তবে কিছুদিন আগের অভিযানের পর থেকেই মাসিক চাঁদার হার বেড়েছে। নয়তো কিভাবে চলে এসকল অবৈধ চোরাই তেলের দোকান।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানাযায় তেল চোর চক্রের সদস্য রাজিব প্রশাসনের এক কর্মকর্তার পারিবারিক গাড়ির ড্রাইভার হওয়ার সুবাদে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি সহ সরকারি জমি দখল করে ভাড়া নামক মাসিক মাসোহারায় নিয়ে থাকেন”জড়িয়ে পড়েছেন অনেক অপকর্মের সাথেও।তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই চাঁদাবাজী ,মারধরসহ একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ধর্ষণ করে ধামাচাপা দেওয়ারও।
অন্যদিকে কুদ্দুস নামক আরেক সদস্যের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি মামলার আসামীদের নিজের দোকানে চাকরি দিয়ে রাতের আঁধারে মাদক ব্যবসাসহ তেলের ডিপো থেকে ছেড়ে আসা বিভিন্ন তেলের কনটেইনার ডাকাতির মামলা রয়েছে রাজধানীর তুরাগ থানায়। এছাড়াও তুরাগের কামারপাড়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আনুমানিক আরো ৫ টি চোরাই তেলের দোকান।
অভিযানের পরেও কিভাবে চোরাই তেলের দোকান চলে জানতে চাইলে মোঃ বিল্লাল জানান পুলিশ দোকান বন্ধ করে দিয়েছে চুরি করে কিছু তেল নামানো হয় তাও আবার পুলিশ দেখলে পালাতে হয় চোরাই তেলের ব্যবসার চেয়ে ভিক্ষা করা ভালো আমাদের বিরুদ্ধে তেল চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।
সরকারি জমি দখল করে অবৈধ দোকান তুলে ভাড়া দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি টাওয়ারের সামনের দোকানের ভাড়া আদায়কারী মোঃ রাজিব বলেন আমি কোন তেল দোকান থেকে কোন ভাড়া উত্তোলন করিনা। মাঝে মধ্যেই রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রোগ্রামে অনেক খরচের প্রয়োজন হয় এই দোকানের ভাড়ার টাকা দিয়ে ছেলে পেলে পোগ্রামে খরচ করে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে কেউ। আমি সামান্য এক চাকরি করি। এসকল বিষয়ে ওই এলাকার বিট ইনচার্জ এস আই আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলে উঠেন ভাই আপনি নিউজের পর থেকেই আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছি তবে চোর চক্রের কোন সদস্যকে পাইনি এখন কোন তেল বিক্রি হচ্ছে না সেখানে। আপনি এসে তেল চুরির সময় দাড়িয়ে থেকে আমাদের ফোন দিয়েন আমরা চোর চক্রকে গ্রেফতার করবো। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চোর চক্রের এক সদস্য জানায় অবৈধ দোকানের ওই এলাকার বিট ইনচার্জ এস আই আক্তার প্রতিমাসে চোর চক্রের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়ার কারণে সঠিক আইন প্রয়োগে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে তিনি।
এবিষয়ে শেরে-বাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ উৎপল বড়ুয়ার কাছে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।