নিজস্ব প্রতিনিধি:
শীত শেষে পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে মশার উপদ্রব বাড়ছে তুরাগ উত্তরা জুড়ে। তুরাগ উত্তরায় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ বসবাসকারীরা। উত্তরায় কিছুটা কার্যকর ভূমিকা পালন করা হলেও তুরাগের জনপ্রতিনিধিরা বলছেন নিজেদের অসহায়ত্বের কথা।
কীটতত্ত্ববিদদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে মশার ঘনত্ব বেড়ে চারগুণ হতে চলেছে। ফলে কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা ওষুধ ছিটিয়ে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে সময়মতো ও সঠিক নিয়মানুযায়ী কাউন্সিলররা নিচ্ছেন না ব্যবস্থা। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মশার ঘনত্ব যেভাবে উচ্চহারে বাড়ছে, তাতে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মশক নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে নতুন কৌশল গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদরা। এ সময় রাজধানীতে মশা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, দেশে এখন চলছে মধ্য ফাল্গুন। শীত শেষে শুরু হয়েছে গরম পড়া। বিগত সময় শীতের পর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এবার শীত থেকে হঠাৎ গরম পড়া শুরু হয়েছে। ফলে বাতাসের আর্দ্রতা কমে গেছে। বৃষ্টির পরিমাণও কম। এতে মশা ও কীটপতঙ্গদের প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া একই রকম থাকলে চলতি মাসে মশার উপদ্রব আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করেন তারা।
মশার আধিক্যের কারণ পরিবেশের প্রভাব থাকলেও এটিই একমাত্র কারণ নয়। এর নেপথ্যে আরও বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। নালা, ডোবা, পুকুর ও পরিত্যক্ত জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার এবং মশা মারার ওষুধ কেনার জন্য প্রতিবছরে দুই সিটি কর্পোরেশনকে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও দুই সংস্থাই নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে বাকি টাকা কৌশলে লুটপাট করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে । সঠিকভাবে ডোবা, জলাধার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে না। মানহীন মশার ওষুধ কেনার কারণে ওই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মশকনিধন কর্মীরা মানহীন ওই ওষুধও নিয়ম মেনে ছিটায় না এলাকাগুলিতে। অভিযোগ আছে তারা বাইরে এসব ওষুধ বিক্রি করে দেয়। জানাযায়, ৫২,৫৩ ও ৫৪ নম্বর এলাকায় বিপুল সংখ্যক মশক নিধন শ্রমিক কাজ করেন। নিয়ম অনুযায়ী এসব শ্রমিক সকালে লার্ভা নিধনে ড্রেনে বা পানি জমে এমন জায়গায় ওষুধ ছিটাবে এবং বিকালে উড়ন্ত মশা মারতে ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটাবে। প্রত্যেক এলাকায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল এ কার্যক্রম করার কথা থাকলেও মাসে দু’চারবার চোখে পড়ে মশকনিধন কর্মীদের চেহারা।
কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন শ্রমিকদের সকাল-বিকাল দু’বার মশক ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও তারা সেটা করেন না। মাসে সর্বোচ্চ দু’বার দেখা মিলে মশকনিধন শ্রমিকদের। নয়ানগর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন বলেন, ‘এই এলাকায় মশকনিধন কর্মীদের দেখাই মেলে না। দিনে দুইবার ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও মাসেও একবার দেখা মেলে না। এইবার মশার উপদ্রব বাড়লে মশক নিধনের কোনো তৎপরতা এখনো চোখে পড়েনি। আমরা দোকানে বসতে পারছিনা সন্ধ্যা থেকেই।’ এলাকাবাসী স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। রমজান মার্কেটে বসবাস করা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রমজান আহমেদ জানান, “তুরাগ এখন মশার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীরা দিনেও পড়ার টেবিলে বসতে পারছিনা মশার যন্ত্রণায়। রাতেতো আরও কষ্টকর। মশারীর ভেতর বন্দী হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই যে মশার হাত থেকে বাচব। তার অভিযোগ আছে এলাকায় মশকনিধন কর্মীদের দেখাই মিলে না। সকাল বিকেলতো দূরে থাক দিনে একবারতো দেখা মিলেই না দেখা যায় না সপ্তাহ অতিক্রম হলেও।”
এসকল বিষয়ে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননে। তবে ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ সাহেব তার অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে জানান, ” আমার ওয়ার্ডে মশক নিধনকর্মী হলো ১০ জন, এলাকা হলো ১৪টি। আমার মশক নিধনকর্মীরা সঠিকভাবে একেকদিন একেকটি এলাকায় যাচ্ছে। যারফলে এটি সময়ের ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই মেডিসিন সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা যদি মশক-নিধন মেডিসিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেই তাহলে দেখা যাচ্ছে, সাপ,টিকটিকিও গৃহপালিত হাস মরে যাচ্ছে। তাই বাড়িয়ে দেওয়াও সম্ভব হচ্ছেনা। অন্যদিকে বিকেলে যে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে সেটা খুব একটা কার্যকর বলে আমার মনে হচ্ছে না। “