মাহমুদুল হাসান আশিকঃ রাজধানীর তুরাগ থানাধীন ধউর-চৌরাস্তা খান মসজিদের পাশের তরী প্যাক্যাজিং এ শিশু শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ।দীর্ঘদিন যাবত তরী ফ্যাশনে কাজ করে আসছিলেন রংপুর জেলাধীন পীরগাছা থানার ঝিনিয়া গ্রামের মুকবুল মিয়ার একমাত্র ছেলে ১৫ বছরের কিশোর জুয়েল মিয়া।গতকাল ৪ অক্টোবর ২০২১ রোজ সোমবার তরী প্যাক্যাজিং ফ্যাক্টরিতে ডিউটিতে যান।দুপুরে লাঞ্চের সময় বাসায় এসে খাবার খেয়ে মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে ফিরে যান ফ্যাক্টরিতে। তার কিছুক্ষণ পরেই বাবার কাছে ফ্যাক্টরির আস-পাশের স্থানীয় বাসিন্দারা খবর জানায় যে, “আপনার ছেলে জুয়েলকে ফ্যাক্টরিতে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তাড়াতাড়ি মেডিকেলে (জাপান ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) যান! লাশ মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
এ খবর শুনে বাবা পাগল হয়ে মেডিকেল গিয়ে দেখেন তার ছেলে জুয়েলকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তাকে দেখে তার সন্তানের শরীরে থাকা গেঞ্জি দিয়ে পেটের আঘাতসহ ক্ষত-স্থানের রক্ত লুকানোর চেষ্টা করছেন কর্মরত চিকিৎসকরা।এই ঘটনা দেখে সে জানতে চায় তার ছেলের কি হয়েছে? তখনি ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ জানায় স্টক করে আপনার ছেলে মারা যায়।ছেলের বাবাকে এই কথা বিশ্বাস করাতে না পেরে আবার জানায় অসুস্থ ছিলো তাই মারা যায়।অতঃপর ছেলের পিতা যখন জানায় আমার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলো দুপুরেও বাসায় সুস্থ ছেলে খেয়ে আসলো এই কথা বলে ছেলেকে ঘুরিয়েই দেখে ছেলের চোয়েলের নিচে ধারালো কোন কিছুর আঘাত,হাতে নীলা-ফুলা মাইরের আঘাত এবং পেটেও রডের আঘাত। তখন আবার ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ কথা পরিবর্তন করে জানায় ওরা একসাথে যেই ছয়জন কাজ করে তাদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে পড়ে মারা যায়।এরই মধ্যে মালিক পক্ষ পিতা মুকবুলকে জানায় লাশ বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।ছেলের বাবা জানায়, “লাশ এখন কোথাও যাবেনা আমার ছেলেকে ফ্যাক্টরিতে মারা হয়েছে তাকে ফ্যাক্টরিতেই নেওয়া হবে।”এরপর ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যাওয়ার পর পরই ঘটনাস্থলে সঙ্গীয় ফোর্স সহ আসেন তুরাগ থানার এস,আই ওয়াজিউর। ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল করেন এবং লাশ থানায় নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিতে যেতেই ছেলের বাবা ও আত্মীয়রা জানান আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাই।আমাদের ছেলেকে কারা মেরেছে না দেখে আমরা আমাদের ছেলের লাশ নিতে দিব না।ভুক্তভোগী পরিবার সাংবাদিকদের জানায়, দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা ধমক দিয়ে এবং তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে সিসিটিভি ফুটেজ না দেখেই জোর করে লাশ নিয়ে থানায় চলে আসেন।পুলিশ চলে আসার পর ফ্যাক্টরির মালিক পক্ষ মৃত জুয়েলের বাবাকে ডেকে বলেন, “ওসির সাথে কথা হয়েছে আমার থানায় গিয়ে ছেলে অসুস্থ ছিলো তাই মারা গেছে এই কথা বলে সিগনেচার করে লাশ নিয়ে দেশে চলে যান তারপরে এসে আমার সাথে দেখা করেন।”অতঃপর ছেলের বাবা জানান আমি বিচার চাই আগে, আমি আগে মামলা করব ফ্যাক্টরির নামে। এই কথা বলার পরই মালিক পক্ষ দ্রুত ফ্যাক্টরি থেকে বেরিয়ে যান।মালিক পক্ষ বেরিয়ে যাওয়ায় লাশের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনরা থানায় আসেন।থানায় এসেই দেখেন ফ্যাক্টরির মালিক তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী -এর সাথে দেখা করে দীর্ঘ সময় মিটিং করে বেরিয়ে যান।এরপর আর ফ্যাক্টরীর মালিক এবং ফ্যাক্টরির কোন কর্মকর্তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ভিকটিমের পরিবার থানায় আসার পর মামলা দিতে চাওয়ায় বাদীদের চাওয়া অনুযায়ী হত্যা মামলা নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ।কর্তৃপক্ষ বলছেন অপমৃত্যু মামলা দায়ের করার জন্য,এ নিয়ে অফিসার ইনচার্জ মেহেদি -এর সাথে কথা কাটাকাটি হয় হত্যার স্বীকার কিশোর জুয়েলের মামার সাথে। অফিসার ইনচার্জ মৃত কিশোরের মামাকে কয়েক দফায় ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে মামলা করতে বলেন। কিন্তু তারা কোন ভাবেই অপমৃত্যু মামলা করতে রাজি হয়নি।তারা থানার সামনে লাশ-বাহী গাড়ী অবরোধ করে রাখেন এবং জানান সঠিক মামলা নেওয়ার আগ অবধি আমরা ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নিতে দিব না এবং কোন সিগনেচার ও করবো না।
রাত প্রায় ১ টা ৩০ মিনিট বেজে গেলেও থানায় কোন মামলা নেয়নি তুরাগ থানা কর্তৃপক্ষ।এরই মধ্যে গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত হন, তাদের উপস্থিতিতে পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয় এবং মামলা লিখেন তবে মামলার এজহারে কোন যখম /আঘাতের কথা উল্লেখ এবং মালিকের নামে মামলা না দেওয়ায় অভিভাবকরা মামলার কাগজে সই করেন নি।অতঃপর মামলার আয়ু অফিসার ইনচার্জের সাথে দীর্ঘ সময় মিটিং করে এসে সাংবাদিকদের জানান, ” মৃত জুয়েলের পরিবার যেভাবে মামলা করবে সেভাবেই মামলা নিবেন”। তার কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন কিনা এবং সিসিটিভি ফুটেজে কি দেখা গেছে জানতে চাইলে তিনি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মুখ না খুলে তিনি বলেন, “উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সম্পর্কে বক্তব্য দেবেন,আমি বিনা অনুমতিতে কিছু বলতে পারব না”এই বলে তিনি ভেতরে চলে যান। অন্যদিকে রাত ৩:৪৫ মিনিটের সময় সাংবাদিকরা থানা থেকে চলে যাওয়ার পর মৃত জুয়েলের বাবাকে থানায় নিয়ে কোন মতে বুঝ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো একটি মামলা রুজু করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা। এবিষয়ে থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে কলে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে উত্তরা জোনের উপ পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামকে কল করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান সেখানেতো একজন শ্রমিক মারা যান।কোন শিশু বা কিশোর হত্যা হয়নি।পরে ছেলেটির বয়স ১৫ বছর জানালে তিনি কথা এড়িয়ে যান।সবশেষ তার কাছে মামলার এজহারে মৃত জুয়েলের শরীরের আঘাত উল্লেখ না হওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান শরীরে ক্ষত থাকলে উল্লেখ হবে।কিন্তু কেন উল্লেখ হয়নি এর সদোত্তর না দিয়ে তিনি কল রেখে দেন।