নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিএ ঈদ-উল-আজহার আর মাত্র বাকী এক দিন। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য কোরবানি। এলক্ষে শেষ মুহূর্তে মানুষ ও কোরবানির পশুতে একাকার উওরার দুটি পশুর হাট। শেষ মুহত্বে উওরার দুটি পশুর হাঁটে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। তবে, হাট ঘুরে দেখা গেছে, হার্ট ভর্তি গরু, ভিড় বেশি। কিন্তু বিক্রি কম। হাটে পর্যাপ্ত দেশি গরু ও ছাগল উঠেছে। তবে পশুরহাটে আসা অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে খামারে লালন-পালন করা দেশি গরুই পছন্দ করছেন। এদিকে, করোনার কারণে আর্থিক সংকটে কোরবানির ব্যাপারে এখনও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এক রকম সিদ্ধান্তহীতায় রয়েছেন। এরই মধ্যে হাটে পর্যাপ্ত পশু উঠলেও কেনাবেচা আজ কম। অনেক ক্রেতা মনে করছেন শেষ দিনে দাম পড়ে যাবে। তখন কোরবানির পশু সস্তায় কিনবেন। আজ সোমবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় দুটি পশুর হাট ‘উওরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন ও আশিয়ান সিটির পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতা, ইজারাদার, বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, হাটে আবার এক শ্রেণির সচেতন মানুষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে পশুহাটে যাচ্ছেন না। তারা অনলাইন পশুর হাটে ঢুঁ মারছেন। দরদামে বনিবনা হয়ে গেলেই মোবাইল অথবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পছন্দসই পশু কিনে ফেলছেন। মূলত কোরবানির হাটে ন্যূনতম কোনো স্বাস্থ্যবিধি না মানায় তারা পশুর হাটে যাচ্ছেন না। আজ দুপুরে উওরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন ও আশিয়ান সিটির পশুর হাট সরেজমিনে ঘুরে ও লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি বছর এমন সময় পশুহাটের কেনাবেচা জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার ঈদের মাত্র দুদিন আগেও সেখানে কেনাবেচা জমে ওঠেনি। যারা হাটে যাচ্ছেন তারা মাঝারি আকৃতির গরু খুঁজছেন কম দামে কেনার জন্য। এজন্য মাঝারি আকৃতির গরুর চাহিদাই বেশি। বড় গরু নিয়ে যারা হাটে থাকছেন তাদের কাছে ক্রেতারা ভিড়ছেন না। তবে,হাটে কোরবানির জন্য তৈরি করা বড় গরুগুলো ও এসেছে। কিন্তু দাম একটু বেশি। বর্তমানে এই দুটি হাটে দেশি গরুই বেশি। মো, আবুল মুনসুর ও আবুল কালাম রিপন নামে দুই গরু ব্যবসায়ীরা বলেন, এবছর পশুর হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে।
হাটে যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দেশীয় জাতের গরু এবং স্বাভাবিক খাবার দিয়ে খামারে লালন-পালন করা গরুই বেশি পছন্দ করছেন। উওরার হাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাটে এলেও দর-দাম করেই অনেকে চলে যাচ্ছেন। আজ সোমবার সকালে বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরের পর আবহাওয়া ভালো থাকলে হাঁটে কেনাবেচা ভালো হবে আশা করছি। উওরার হাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা নাসির উদ্দীন নামে এক খামারি বলেন, পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা, হাটে তোলা, খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা- এই পুরো সময়টা জুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। তিনি আরও জানান, এসময় মুখে নাকে-মুখে মাস্ক পড়ে থাকা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। যে কারণে হাটে আসা অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও খামারিই নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে পারছেন না। এছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা, তাকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানান কারণে তারা হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না। এদিকে, উওরার দুটি হাটে কোরবানির পশুর দাম এবার বেজায় চড়া বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা। তুরাগের স্হায়ী বাসিন্দা রুমন মোস্তাফিজ বলেন, গত বছর ছোট গরু ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা, মাঝারি আকৃতির গরু থেকে ৭৫ থেকে ১ লাখ টাকা এবং বড় আকৃতির গরু দেড় লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচচ ১৩ লাখ টাকার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে। উওরার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন সিরাজী নামে এক ব্যক্তি জানান, এবছর পশুর হাটে পাইকার ও গরু ব্যবসায়ীরা এই গরুগুলো আকৃতি হিসেবে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে বেশি দাম চাইছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এ অবস্থায় গরুর দাম বেশি হলে অনেক সাধারণ মানুষই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এবার ঈদে পশু কোরবানি দিতে পারবেন না। উওরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন পশুর হাটের ইজারাদার হলেন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয় সম্পাদক মো, নূর হোসেন। তিনি বলেন, হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। হাটে গরুতে সয়লাভ হয়ে গেছে। প্রচুর পরিমান গরু উঠেছে। তবে, ক্রেতার উপস্হিতি থাকলেও গরু বেচাকেনা তুলনামূলক কম। আশা করছি, আবহাওয়া ভালো থাকলে আজ বিকেল থেকে হাঁটে পশুর বেচাকেনা বাড়বে। হাটে নিরাপত্তার কোন অভাব নেই বলে জানান তিনি। এসময় স্বাস্থ্যবিধি প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করতে আমরা বারবার মাইকিং করছি। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করছি। এরপরও পশু হাটে করোনা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা চলছে। কুষ্টিয়া, যশোর ও পাবনা থেকে উত্তরার কোরবানির পশুর হাটে বড় আকৃতির ২৫টি গরু নিয়ে এসেছেন ইসলাম, মিজান ও মারুফ নামে তুরাগের তিন গরু ব্যবসায়ী। তিনি জানান, বাজারের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। কাস্টমার গরু বুঝে দাম কয় না। ক্রেতারা যে দাম কয় তাতে কেনা দামই উঠে না, খরচ তো দূরের কথা। কুষ্টিয়ার মো, কুতুব উদ্দিন নামে এক গরু পাইকার বলেন, এক-একটি গরুতে ১২ থেকে ১৫ মণ মাংস হবে। দাম চাচ্ছি সাড়ে চার লাখ, তিন লাখ, আর বাকি দুডো আড়াই লাখ করে। কিন্তু লোকজন বড়টার দাম কয় ২ লাখ। এতে গরু বেচা হবে নানে। কাইটে বেঁচলেও সাড়ে ৪ এর বেশি বেঁচা যাবে। ফরিদপুরের সদরপুর এলাকা থেকে ১৭টি গরু নিয়ে উত্তরার এই হাটে এসেছেন ব্যাপারি শেখ জাকারিয়া। তিনি বলেন, গরুর বাজার ভালো না। ছোট গরু বিক্রি করে লাভ নাই। ক্রেতারা অনেক কম দাম বলে। এখন দেখা যাচ্ছে লোকসানে পড়তে হবে। আশিয়ান সিটির গরুর হাটে মো, আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, এই বাজারে প্রচুর গরু আছে কিন্তু বিক্রেতারা দাম চাইছে অনেক বেশি। আমাদের বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে। মাঝারি সাইজের গরুর দাম চাইছে দেড় লাখের বেশি। আর ছোট গরুগুলো ৮০ হাজারের নিচে নাই। বাজার দেখছি। দামে ও সাইজে মিললে গরু কিনবো। এখনও সময় আছে। এ হাটের ইজারাদার হলো মো সোহেল।