,


শিরোনাম:
«» তুরাগে গৃহবধু হত্যার অভিযোগে স্বামীর বন্ধু গ্রেফতার «» ভাড়া বাসায় অবস্থান করে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতী করতো তারা’ «» ঈশ্বরদীতে ২০০ লিটার মদসহ গ্রেফতার ১ «» ঈশ্বরদীতে নবজাতক হত্যার অভিযোগ সাবেক স্বাস্থ্যকর্মীর আকলিমার বিরুদ্ধে «» সাংবাদিকতার দায় একমাত্র জনসাধারণের কাছে:তিতুমীর «» ঈশ্বরদীতে প্রণোদনার সার-বীজ প্রদানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ প্রকৃত কৃষকদের «» ঈশ্বরদীতে বালু খেকোদের কবলে বিলিন হাজার হেক্টর ফসলি জমি, দিশেহারা কৃষক «» ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালিত র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত «» চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাবেক এমপি ও জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনে হামলা «» চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষকলীগের অনুষ্ঠানে সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা মিনহাজ আহত

প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকে সুনামগঞ্জের লক্ষলক্ষ মানুষ

মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জঃ বাংলাদেশের হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিতি সুনামগঞ্জ জেলা। এজেলার বেশি ভাগ গ্রাম হাওরের মাঝে অবস্থিত। তাই বর্ষাকাল আসলেই জেলার লক্ষলক্ষ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। এসময় ঝড় ও হাওরের বিশাল আকৃতির ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙ্গে যায় বসতবাড়ি ও গাছপালা। দুষ্প্রাপ বাঁশ, খড়, মাটি, কচুরিপানা, ঘাস দিয়েও বসতবাড়ি রক্ষা করা সম্ভব হয়না। তখন গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপদে। সেজন্য বাধ্য হয়ে পানির দরে বিক্রি করতে হয়। তখন দেখা দেয় খাবার পানির তীব্র সংকট। হাওর এলাকার যোগাযোগের কাঁচা ও পাকা বেশির ভাগ নিচু সড়কগুলো থাকে পানির নিচে। এজন্য কাঠের তৈরি ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে হাওরের মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। তখন নৌকা ডুবে প্রায়ই ঘটে প্রাণহানীর ঘটনা। বছরের ৬ থেকে ৭ মাস পানি বন্ধি থাকতে হয় হাওরবাসীকে। তাই বিভিন্ন সমস্যার সাথে লড়াই করতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানাযায়- সুনামগঞ্জ জেলার অবহেলিত তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা-মধ্যনগর ও দিরাই-শাল্লা উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ হাওরে কৃষি কাজ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বর্তমানে জেলার চারদিকে অথৈ পানি থৈথৈ করছে। হাওরের মাঝে অবস্থিত গ্রামগুলোকে দূর থেকে দেখলে দীপের মত মনে হয়। ভাংগা-ছুরা পাকা সড়ক দিয়ে উপজেলা সদর থেকে জেলা শহরে কোন রকম যাতায়াত করা যাচ্ছে। কিন্তু উপজেলা সদরের সাথে বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। তাই ছোট-বড় ইঞ্জিনের নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করছে হাওরের মানুষগুলো।হাওর এলাকা গুলোর প্রধান সমস্যা হচ্ছে অকাল বন্যা ও ফসল হানী। এছাড়াও রয়েছে সমুদ্রাকৃতির বিশাল ঢেউ। আর বন্যা দেখা দিলে হাওর এলাকার মানুষের দূর্ভোগের কোন শেষ থাকেনা। এসময় তারা ঘরের ভিতর বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে বসবাস করে। আর পানির পরিমান বেশি বাড়লে কেউ কলার ভেলায় আবার অনেকেই নৌকার মাঝে আশ্রয় নেয়। তবে বন্যার সময় হাওর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলো পরিণত হয় অসহায় মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে। এসময় কোন মানুষ মারা গেলে তার মৃতদেহ দাফন-কাফন কিংবা সৎকারের ব্যবস্থা থাকেনা। গো-খাদ্য, জ¦ালানী কাঠ ও শুকনো খাবারসহ বিশুদ্ধ খাবার পানি তীব্র সংকট দেখা দেয়। পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে হাওরের গ্রামগুলো বিদ্যুতায়িত হলেও বেশির ভাগ গ্রাম থাকে অন্ধকারে। কারণ সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়না। বর্ষাকালে হাওরাঞ্চলে বেড়ে যায় চোর ডাকাতের উপদ্রুপ। নৌকা যোগে ডাকাতরা এসে বিছিন্ন গ্রামগুলোতে হানা দেয়।এলাকার মানুষ সারারাত জেগে পাহাড়া দিয়েও রক্ষা করতে পারে না তাদের মূল্যবান সম্পদ।এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকা দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় শিক্ষার দিক দিয়ে রয়েছে অনেক পিছিয়ে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তার আগে থেকেই হাওরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোর দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের অবহেলার কারণে প্রতি বছরই ঝড়ে পড়েছে হাজার হাজার শিশু শিক্ষার্থী। কারণ শিক্ষা কর্মকর্তারা নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন ও তদারকি না করার কারণে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে না যায় না। বেশি ভাগ শিক্ষকরা রাজনীতি ও ব্যবসা- বাণিজ্যসহ নানান কাজে ব্যস্ত। যার ফলে নামসর্¯^ প্রতিষ্টানে পরিণত হয়েছে হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ স্কুল। তাছাড়া হাওর এলাকা গুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সারা বছরই লেগে থাকে। তাই হাওর ও পুকুরের পানি পান করতে হয় হাওরবাসীকে। এছাড়া বেশির ভাগ মানুষ খোলা ল্যাট্টিন ব্যবহার করে। একারণে ডায়রিয়া, আমাশয় ও কলেরাসহ নানাবিদ পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয় তারা। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান ডাক্তার-নার্স ও ঔষধ না থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে হাওরবাসী। এসব নানাবিধ সমস্যার সাথে লড়াই করে প্রতিনিয়ত বেঁচে আছে সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকার লক্ষলক্ষ অসহায় মানুষ। কিন্তু তাদের এসব সমস্যা দেখার কেউ নেই। এব্যাপারে তাহিরপুর জয়নাল আবেদীন মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আলী মর্তুজা বলেন-বর্তমান সরকার সারাদেশের উন্নয়নের জন্য যে ভূমিকা নিয়েছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে কৃষকদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ্য হতে হয়। উপজেলার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ভাংগা চুরা। সেগুলো দ্রুত মেরামত করাসহ স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন করা জরুরী প্রয়োজন। বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কামাল হোসেন, লোকমান হোসেন, হুমায়ুন কবিরসহ আরো অনেকে বলেন- বর্ষাকাল আসলেই শক্তিয়ারখলা-বিশ^ম্ভরপুর সড়কটি ডুবে যায়। বন্যা হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েপড়ে। এছাড়াও নানান দূর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু এসব সমস্যা দেখার কেউ নাই। জামালগঞ্জ উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক ও কৃষক তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ বলেন- হাওরের বেরী বাঁধগুলো কখনোই সঠিক ভাবে নির্মাণ করা হয়না। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করেনা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তাররা এসে বেশি দিন থাকেনা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে সব সময় আমরা বঞ্চিত। এছাড়া জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ যাতায়তের প্রধান সড়কসহ হাওর এলাকার বেশির ভাগ সড়কই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এসব সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও আজ পর্যন্ত সমাধান হয়নি। আমরা হাওর এলাকার মানুষ সব সময় সব দিক থেকেই চরম অবহেলিত।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।
ঘোষনাঃ