ডেস্ক,ক্রাইম নিউজ ঢাকাঃ “রোযা” শব্দটি ফারসি শব্দ। আরবীতে সাওম,সিয়াম এবং রমাদ্বান বলা হয়।
শব্দ ২ টির শাব্দিক অর্থ হলোঃ সাওম অর্থ: বিরত থাকা,উপবাস থাকা। রমাদ্বান অর্থ: জ্বালিয়ে নেওয়া, ভষ্ম করা।
সংজ্ঞাঃ শরীয়তের পরিভাষায় সওমের নিয়ত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত অবধি সকল প্রকার পানাহার ও সেক্সুয়াল সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোযা।
যাদের উপর রোযা ফরযঃ প্রত্যেক আকেল (বোধসম্পন্ন), বালিগ (প্রাপ্ত বয়ষ্ক) ও সুস্থ মুসলমান নর-নারীর উপর রোযা ফরজ।
রোযার নিয়তঃ সুবহে সাদিকের আগে মনে মনে এই নিয়ত করবে যে, “আমি আজ রোযা রাখবো ” অথবা দিনে ১১ টার আগেই [আনুমানিক] মনে মনে এরূপ নিয়ত করবে যে, “আমি আজ রোযা রাখলাম” মুখে নিয়ত করা মুস্তাহাব, কিন্তু জরুরী নয়।
রোযার ফযিলতঃ নবী কারিম (সঃ) বলেন প্রত্যেক মানুষের আমলের সওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুণ অবধি বাড়িয়ে দেওয়া হয় পবিত্র রমজান মাসে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন রোযার ব্যাপারটি ভিন্ন। “কারণ রোযা আমার জন্য। সুতারং এর প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব। ” [সহীহ মুসলিম-১১৫১,বুখারী-১৮৯৪] •রোযা কেয়ামতের দিন রোযাদারের জন্য সুপারিশ করবে।
•রোযা জাহান্নামের আগুনের ঢাল ও দূর্গ •রোযাদার জান্নাতের রাইয়ান নামক শাহী তোরান দিয়ে প্রবেশ করবে •রোযাদারের জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে •রোযাদারের দোয়া কবুল করা হয়,ফেরত দেওয়া হয় না •রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দঘন মূহুর্ত রয়েছে,১-ইফতারের সময় ২-স্বীয় প্রভুর সাক্ষাতের সময় •রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও বেশি সুঘ্রাণ যুক্ত।
দুনিয়াতে রোযার উপকারিতাঃ
★দেহ ও আত্মাকে পাপের কাজ থেকে বিরত রাখে ★ মানুষ কুপ্র-বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি পায় ★ মানুষের মাঝে স্নেহ মায়া-মমতা বৃদ্ধি পায় ★দেহকে সুস্থ রাখে অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখে ★ ডায়াবেটিস পাকস্থলী ও হৃদরোগের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে ★পাকস্থলীকে শক্তিশালী করে ★ হজম প্রক্রিয়া পূর্বের চেয়ে শক্তিশালী করে ★লোভ, ক্রোধ সংযম রাখতে সহায়তা করে ★শরীরের চর্বিগুলোকে গলিয়ে শক্তিতে রূপান্তর করে ।
রোজার আদব সমূহঃ
★সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে হেফাজত করা। যেমনঃ বেগানা নারীর দিকে দৃষ্টিপাত ও টিভি সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকা ★ জবানের হেফাজত- অর্থাৎ মিথ্যা, গীবত, পরনিন্দা, অশ্লীল কথা ও ঝগড়া থেকে দূরে থাকা ★ কানকে সর্বপ্রকার গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করা যেমনঃ গান-বাদ্য গীবত পরনিন্দা ও অশ্লীল কথাবার্তা শোনা থেকে দূরে থাকা ★এছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমনঃ হাত ও পা ইত্যাদিকে গুনাহ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা ★সাহরী ও ইফতারে হারাম আহার না করা ★রোজা অবস্থায় আল্লাহর আযমত ও বড়ত্বের কথা এবং তার হুকুম আহকাম বেশি বেশি স্মরণ করা।
যে সকল কারণে রোজা ভঙ্গ হলে কাযা কাফফারা উভয় ওয়াজিব হয়ঃ
★ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে ★ইচ্ছাকৃত যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হলে ★ধুমপান করলে।[সিগারেট, গাজা,ইয়াবা, বিড়ি,হিরোইন যাই হোক] স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্বেও সহবাস করলে স্বামীর উপর কাযা এবং কাফফারা দুটিই ওয়াজিব কিন্তু স্ত্রীর উপর শুধুমাত্র কাযা ওয়াজিব হয়। যে সকল কারণে কাজা
যে সকল কারণে কাজা ওয়াজিব হয় রোজা ভঙ্গ হলেঃ
★সূর্যাস্ত গিয়াছে মনে করে সময় হওয়ার আগেই আহার করা ★স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরা বা চুম্বন দেওয়ার দরুন বীর্যপাত হওয়া ★সাহরির সময় আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করা ★কুলি করার সময় অসতর্কতা বসত গলায় পানি চলে যাওয়া ★নাকে বা কানে ঔষধ দিলে তা পেটে চলে গেলে ★সাহরিতে মুখে পান নিয়ে সুবহে সাদিকের পর অবধি ঘুমানো ★দুপুরের পর রোযার নিয়ত করা ★দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত থুতুর চাইতে বেশি হয়ে তা গলার ভিতর চলে গেলে ★ঘাম বা চোখের পানি মুখে ঢুকে গলায় চলে গেলে ★অসুস্থ ও দূর্বলতার কারণে রোযা ভাঙ্গলে।
যে সকল কারণে রোযা মাকরূহ হয়ঃ
★অপ্রয়োজনে কোন কিছুর স্বাদ আস্বাদন করা ও বাচ্চাকে চিবিয়ে দেওয়া ★স্ত্রীকে চুমু দেওয়া ★মুখে জমাকৃত লালা গিলে ফেলা ★দাতের মাড়িতে মেডিসিন সেবন করা ★রগ থেকে রক্ত বের করানো ★গীবত করা ★ঝগড়া-বিবাদ করা ★গালি দেওয়া ★টুথপেষ্ট দিয়ে ব্রাশ করা।[মিসওয়াক করা যাবে; সুন্নত]
রোযার মুস্তাহাবঃ
★সূর্য ডুবার সাথে সাথে ইফতার করা ★খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় খাবার দ্বারা ইফতার করা ★ইফতারের সামগ্রী থেকে বিজোড় সংখ্যায় আহার করা ★বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে সাথে ইফতারের দোয়া পড়া (আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফত্বারতু) ★সাহরিতে সুবহে সাদিক অবধি দেরি না করা ★অহেতুক কথা হতে জবানকে হেফাজত করা ★সামান্য হলেও সাহরিতে কিছু পরিমান খেয়ে নেওয়া ★আত্বীয় স্বজন ও ফকির মিসকিনকে দান করা ★জ্ঞানার্জন করায় মশগুল থাকা ★সর্বদা যিকিরে ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতে মশগুল থাকা।
যে সকল কারণে রোযা মাকরুহ ও নষ্ট হয়নাঃ ★ মিসওয়াক করা ★মাথায় এবং গোফে তেল দেওয়া ★চোখে ঔষধ ও সুরমা লাগানো ★সুঘ্রান দেওয়া ★গরমের কারনে গোসল করা ★ইঞ্জেকশন বা টিকা নেওয়া ★ভুলে পানাহার করা ★গলার ভেতর অনিচ্ছাকৃত ধোঁয়া, ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি চলে যাওয়া ★কানের ভিতরে পানি চলে যাওয়া ★অনিচ্ছাকৃত বমি করা ★ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হওয়া ★দাত থেকে রক্ত বের হয়েছে কিন্তু গলার ভেতরে যায়নি ★গোসল ফরজ হওয়ার পর গোসল না করে সেহরি খেলে,রোযার নিয়ত করলে ★শরীরে ভিজা কাপড় রেখে শরীরকে ঠান্ডা রাখা ★রোযা অবস্থায় অপারেশন করা [যদি রোগী ক্লান্ত না হয়]