মাহমুদুল হাসান,ক্রাইম নিউজ ঢাকাঃসুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা ভাই ও বোন আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জামাতের সাথে সালাত আদায় করলে সেটা একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি ফজিলতপূর্ণ।এ হাদিসের ভিত্তিতে অনেক মা বোন প্রশ্ন রাখেন যে, একজন পুরুষ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে সালাত আদায় করে ২৭ গুণ বেশি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছেন,একাকী সালাত আদায় করীর চেয়ে।একজন নারী শুধুমাত্র নারী হিসেবেই সৃষ্টি হওয়ার কারণে, বাসায় একা একা সালাত আদায় করতে হয় তিনি জামায়াতের সাথে সামিল হতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তিনি ২৭ গুণ ফজিলত থেকে যে বঞ্চিত হচ্ছেন।এই ক্ষেত্রে তার করণীয় কি?
একই প্রশ্ন অন্য আরও অনেক আমলের ক্ষেত্রে দেখা দেয় যেমন জুমার দিন মসজিদে আগে আগে হাজির হওয়ার মধ্য দিয়ে যে বিপুল পরিমাণ সাওয়াব অর্জন করা যায় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একজন নারী সে ক্ষেত্রে অনেকাংশেই বঞ্চিত থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কি?
এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আমি যে কথাটি বলতে চাই তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন হাদিসে তিনি বলেছেন, মেয়েদের জন্য সবচেয়ে উত্তম সালাত হলো তার বাসায় সালাত আদায় করা। একজন নারী মদিনার অধিবাসী ছিলেন, তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন ইয়া রাসুলল্লাহ আমি আপনার পেছনে মসজিদে নববীতে উপস্থিত হয়ে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করতে চাই। এটা আমার ভালো লাগে।
নবিজী (সঃ) তখন তাকে বলেছিলেন যে, আমার পেছনে সালাত আদায় করার চাইতে তোমার ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম এবং বাসার অভ্যন্তরে যত ভেতরে গিয়ে সালাত আদায় করবে সেটাই তোমার জন্য তত বেশি উত্তম। [মুসনাদে আহমাদ,২৭০৯০]
সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি এবং বিশ্ব বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আব্দুল আজিজ আব্দুল্লাহ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ এই সমস্ত হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন যে,এই সমস্ত হাদীসে রাসুলে কারিম [সাঃ] যেখানে ‘আফদ্বাল’ শব্দ ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ আমার পেছনে মাসজিদে জামায়াতের সাথে তুমি একজন নারি সামিল হয়ে সালাত আদায় করার চাইতে তোমার বাসায় সালাত আদায় করলে বেশি উত্তম হবে।এখানে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বেশি উত্তম হবে বলেছেন,তার মানে হলো সাওয়াবের দিক থেকে ২৭ গুণের সমপরিমাণ কিংবা এর চাইতে বেশি উত্তম হবে এই কারণে যে, তুমি আল্লাহ এবং তার রাসূল (সাঃ) এর সিদ্ধান্তকে মেনেছ এবং তুমি তোমার বাসায় সালাত আদায় করেছ।
অতএব নারীরা যদি বাসায় সালাত আদায় করেন তাদের মধ্যে আগ্রহ থাকে যে, পুরুষ হিসেবে আমি যদি জন্ম নিতাম তাহলে আমি অবশ্যই মাসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতাম! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে বাসায় বসেও একেকী সালাত আদায় করলেও ২৭ গুণ যে সাওয়াব পুরুষরা লাভ করছেন সেটা তাদেরকেও দান করবেন।
দ্বিতীয় কথা হলো সহীহ মুসলিম বর্ণিত রয়েছে যে, রাসুল কারিম সাঃ বলেছেন,যে ব্যক্তি কোন ভালো কাজের পথ মানুষকে দেখাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ওই ভালো কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তির অনুরুপ সাওয়াব তাকেও দান করবেন।অতএব মা বোনরা তাদের বাসায় যে সমস্ত পুরুষরা আছেন তাদেরকে তাগিদ দিয়ে জামাতের সহিত নামাজ আদায় করার তাগিদ দেন & সহযোগিতা করেন তাহলে ইনশা-আল্লাহ ভালোকাজের পথ দেখানোর মাধ্যমে তারাও একই পরিমাণ কাজের সাওয়াব মানে ২৭ গুন সাওয়াব তারা লাভ করতে পারেন।সেই সাথে আরেকটি কথা না বললেই নয়! তা হলো,আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছু কিছু আমল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য রেখেছেন তার জন্য সেই আমলগুলো প্রযোজ্য হলেও আবার কিছু কিছু ফজিলত নারীদের জন্য প্রযোজ্য যেগুলি পুরুষরা চাইলেও পারবে না।যেমনঃ ১/ কোন নারী যদি সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যায়,তাহলে তার জন্য শাহাদাতের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।
২/ কোন নারী যদি হজ্জ্ব করেন তাহলে নারীদের হজ্জ্ব জীহাদের সমতুল্য বলা হয়েছে।
কিন্তু পুরুষদের জন্য সেটি বলা হয়নি। কিছু কিছু ফজিলত আছে যেগুলি পুরুষদের জন্য কিছু কিছু ফজিলত আছে যেগুলি নারীদের জন্য। অতএব এই সমস্ত ফজিলত গুলি আমরা অর্জন না করতে পারার যে কষ্ট সেটি আমাদের লাগাটা অস্বাভাবিক নয়। আবার এর জন্য খুব বেশি ব্যকুল হওয়াও আমাদের উচিৎ নয়।আর সালাতের বিষয়টি আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিৎ কারণ, একজন নারী যদি আল্লাহ এবং তার রাসুল সাঃ এর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বাসায় সালাত আদায় করেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সালাতকে পুরুষের মাসজিদে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম বলেছেন।তাই এই বিষয় নিয়ে তার মন খারাপ করার কোন কারণ নেই।