প্রতিনিধি,সুনামগঞ্জ:সুনামগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা
মামুনুল হককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে
কুটক্তি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের
২০টি বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর করাসহ লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। আজ
বুধবার (১৭ই মার্চ) সকাল ৯টায় এই হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাটি ঘটে।
আর ফেসবুকে কুটক্তি করার অপরাধে ঝুমন দাস আপন (৩৫) নামের এক
যুবককে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে। এঘটনার পর থেকে
এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়- গত সোমবার (১৫ই মার্চ)
বিকেলে দিরাই উপজেলায় হেফাজতের আয়োজিত একটি সমাবেশে
উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব
মাওলানা মামুনুল হক। এরপর থেকে জেলার শাল্লা উপজেলার হবিবপুর
ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত গোপেশ দাসের ছেলে ঝুমন দাস
আপন (৩৫) তার নিজের ফেসবুক আইডিতে মাওলানা মামুনুল হককে
‘বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য’ বিরোধী নেতাসহ আরো বিভিন্ন মন্তব্য করতে
থাকেন। তার এই মন্তব্যে কমেন্ট করতে থাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতশত
লোকজন। আর এই দৃশ্য দেখে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম
মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকের অনুসারীরা ক্ষেপে যায় এবং গতকাল
মঙ্গলবার (১৬ই মার্চ) রাত সাড়ে ১১টায় শাশখাই নামক গ্রাম থেকে
ঝুমন দাস আপনকে আটক করে পুলিশের নিকট সোর্পদ করে। এঘটনার
পর থেকে হিন্দু সম্প্রাদায় ও হেফাজতের মামুনুল হকের অনুসারীদের
মাঝে উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়।
তাইর জের ধরে আজ বুধবার (১৭ই মার্চ) সকালে হেফাজতে ইসলামের
কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকের অনুসারীরা অস্ত্র-
সস্ত্র ও লাটি-সুটা নিয়ে হিন্দু সম্প্রাদায়ের নোয়াগাঁও গ্রামে
গিয়ে হামলা চালিয়ে শৈলেন্দ্র দাস, ওনিল দাস, ধীগেন দাস, হরিপদ দাস,
রবিন্দ্র দাস, রন্ট দাস, ওসীম চক্রবর্তী, দেবেন্দ্র কুমার দাস, নগেন্দ্র
কুমার দাস, অমর চান দাস, মানকি দাসের বসতবাড়িসহ প্রায় ২০টি
বাড়ি ও মন্দির ভাংচুর করাসহ লুটপাট করে। কিন্তু কেউ হতাহত হয়নি।
হামলার খবর পেয়ে হিন্দুধর্মালম্বীরা আগেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এব্যাপারে ভোক্তভোগী শৈলেন্দ্র দাস, অমর চান দাস, রন্টু দাস বলেন- যে
ছেলেটি ফেসবুকে কুটক্তি করছে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরও
আমাদের বাড়িঘর, মন্দির ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। আমরা আমাদের স্ত্রী-
সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি।
হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বলেন-
কয়েক হাজার মানুষ এসে হঠাৎ গ্রামে হামলা চালিয়ে বসতবাড়ি,
মন্দির ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। জাতিক জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের জন্মদিনে এমন ঘটনায় আমরা হতবাক হয়েছি।
এই ব্যাপারে শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার
কারণে ঝুমন দাস আপন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর
হঠাৎ করেই গ্রামে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। খবর পেয়ে দ্রুত
ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বর্তমানের ঘটনাস্থলে
পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।