বিশেষ প্রতিনিধি: রাজধানীর উত্তরার তুরাগ থেকে শুরু করে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর কামারপাড়া সুইচগেইট হতে আব্দুল্লাহপুর, ফায়দাবাদ, রাজাবাড়ী, উত্তরখানে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকা সত্বেও ৯ নাম্বার সেক্টর সহ কামারপাড়া বালুরমাঠ বস্তি থেকে শুরু করে পুরো ১০ নং সেক্টর ও তুরাগের অলি-গলিতে খুব সহজেই মিলছে মাদকদ্রব্য। ১০ নং সেক্টরসহ তুরাগের কয়েকটি মাদকের হটস্পটের মধ্যে উত্তরা ১০ নং সেক্টরের বালুমাঠ সংলগ্ন বস্তি অন্যতম বলে জানান স্থানীয়রা। তুরাগের সুন্দরবন সংলগ্ন রাস্তার উল্টো পাশে মুচিপাড়া নামক স্থানটিতে প্রকাশ্যে জনসম্মুখেই বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য। আর এ সব জায়গায় রয়েছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী। খুব সহজেই মাদক পাওয়ায় এখানে মাদকসেবীরা চলে আসে মাদক কেনার জন্য। আর মাদক চোরাকারবারীরা অভিনব কৌশলে এখানে মাদক সরবরাহ করে। মাদক সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরীদের। জানা গেছে, মুচিপাড়ার মাদকদ্রব্য আসে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের পরিবহনের মাধ্যমে। ধউর পুলিশ চেকপোস্টের আগেই মাদকদ্রব্য নিয়ে নেমে যায় মাদক ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, “বিভিন্ন জেলা থেকে মাল নিয়ে আসার পর ধউর নেমে লোকাল বাসে উঠে মুচিপাড়া সহ কামারপাড়ার বিভিন্ন স্থানে মাদক পাঠিয়ে থাকি”। পুলিশের একটি মামলার সূত্রে জানা গেছে, ধউর থেকে ছেড়ে আসা একটি লোকাল পরিবহন দিয়ে মুচিপাড়া থেকে মাদকদ্রব্য ডেলিভারি হতো রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। অন্যদিকে টঙ্গী তুরাগ নদী সংলগ্ন হামিম গ্রুপের পিছন দিয়ে একটি নৌকার ঘাট রয়েছে শ্রমিকদের নদী পারাপারের জন্য। স্থানটি গুদারাঘাট নামে পরিচিত আর এই গুদারাঘাট দিয়েই মাদকের সকল চালান পারাপার হয় অথবা আশপাশের শাখা রাস্তা দিয়ে টঙ্গী আমতলী থেকে অটোরিকশার সিটের নিচে বা নদীতে থাকা ছোট ছোট নৌকা দিয়ে মাদক পারাপার করে বস্তি সহ আশপাশের এলাকা গুলিতে ছড়ায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একই ভাবে দক্ষিনখানের ফায়দাবাদে মোড়ঘাট হয়ে দক্ষিনখান, উত্তরখানসহ বিভিন্ন স্থানে মাদক ছড়িয়ে পরে। বিশেষ করে তুরাগ নদীর দক্ষিন পাড় ঘেষে কামাড়পাড়া সুইচগেইট হতে আব্দুল্লাহপুর, ফায়দাবাদ, রাজাবাড়ী, উত্তরখান মাদক পাচার হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নদীর পাশের ওয়াকওয়েতে সাভাবিক চলাফেরা করাও বিপদ জনক হয়ে পরেছে স্থানীয় মাদকসেবনকারী ও ছিনতাইকারীদের জন্য। আরো জানা যায়, প্রতি শুক্রবার তুরাগ নদীতে নৌকা ভ্রমন নামে চলে তরুন তরুণীদের অশ্লীল নৃত্য ও মাদক সেবনের আখরা। এছাড়াও ১০নং সেক্টরের সড়কগুলির পাশেই রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের ট্রাক বাস সহ বিভিন্ন গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা আর এই গাড়ি থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক মাসিক চাঁদা উত্তোলন করে আসছে এছাড়াও মাদকের একটি বড় অংশ চলে যায় গাড়ি চালক ও হেল্পারদের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন চা বিক্রেতা জানান, এই বালুরমাঠ বস্তিঘরের প্রায় প্রতিটি ঘরেই মাদকের ব্যবসা চলে। তিনি আরো বলেন, মাদক বেচাকেনা করার জন্য ব্যবহার করা হয় কম বয়সি কিশোর কিশোরীদের, অনেক সময় এসব কিশোর প্রশাসনের হাতে আটক হলেও পাইকারি বিক্রেতা বা গডফাদাররা অদৃশ্য খুঁটির জোরে বারবারই থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে,,
অপর একটি সূত্র জানায়, উত্তরা ১০নং সেক্টরের বালুরমাঠের মাদক চোরাকারবারি ও গডফাদাররা কখনো বস্তিঘর থেকে তেমন বাইরে বের হয় না। আশপাশের প্রবেশের প্রতিটি রাস্তায় আছে নিজদের চেকপোস্ট। ফলে চেকপোস্ট দিয়ে প্রশাসনের লোকজন প্রবেশ করার সাথে সাথেই খবর পৌঁছে যায় গডফাদারদের কাছে। ফলে পুলিশ, ডিবি কিংবা অন্য কোন বাহিনী অভিযানে আসলে মাদক সহ গডফাদাররা নিরাপদ স্থানে চলে যায়। এতে করে মাদক বিরোধী অভিযানের সফলতা চুনোপুঁটিদের আটকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। এদিকে তিন হাজারের বেশি প্লট নিয়ে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরটি সবচেয়ে বড় সেক্টর। অথচ এই সেক্টরে নেই কোনো পার্ক, খেলার মাঠসহ চিত্তবিনোদনের কোন ব্যবস্থা। কথা ছিল কবরস্থান থাকার সেটিও নেই। সেক্টরের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ বস্তি সহ নানা অবৈধ স্থাপনার কারনে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল। তাই স্থানীয় বাসীন্দারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।